অপার রহস্য আর গোপনীয়তায় ভরা মহাশূন্য সম্পর্কে আরও কিছু জানার কৌতূহলেই কেবল মহাকাশ গবেষণা সীমাবদ্ধ নেই এখন। জেট যুগে জেন জি-র পছন্দের লবজ ‘মহাকাশ পর্যটন’। অন্তত মহাকাশ এখন বেসাতির স্থান হয়ে উঠেছে। বেসরকারি ধনকুবের সংস্থাগুলি মহাকাশ গবেষণার পাশাপাশি মহাকাশ পর্যটনেও এখন বিনিয়োগ করছে। লক্ষ্য, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মানুষকে নিয়ে মহাশূন্যে ঘুরতে যাওয়া। এবার ভাবুন তো, যদি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আপনি মহাকাশ ভ্রমণে যান আর সেখানেই প্রসবের মতো পরিস্থিতি যদি হয়, তাহলে কেমন হবে? না, ঘাবড়াবেন না মোটেই। সন্তানের জন্ম দিতেই পারেন, তবে প্রচুর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে তাকে। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে সেসব চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত। মাধ্যাকর্ষণ বল শূন্য হয়ে যাওয়ায় মহাকাশে ভাসমান অবস্থা ছাড়া অন্য কোনওভাবেই থাকা সম্ভব নয়। ছোটবেলা থেকে যেভাবে আমরা হাঁটাচলা শিখি, সেই সহজাত কৌশল এখানে চলে না। আর সেই জন্য কখনও কখনও মহাকাশ অভিযানে যাওয়ার আগে নভশ্চরদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মহাশূন্যে হাঁটার ট্রেনিং। এই অবস্থায় যদি অন্তঃসত্ত্বা কোনও মহিলা স্পেস ওয়াকে যান, তাহলে তাঁর শরীরে থাকা ভ্রূণও সেই কৌশল রপ্ত করে ফেলবে। কারণ, মায়ের গর্ভের ‘অ্যামনিওটিক ফ্লুইডে’ সে ভাসমান অবস্থাতেই থাকে। তাই তা তার কাছে বিশেষ কঠিন কিছু নয়।
এছাড়া অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মহাকাশ ভ্রমণের আরও বড় চ্যালেঞ্জ হল মহাজাগতিক রশ্মির ‘আঁচ’ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং সর্বোপরি ভূপৃষ্ঠের মৃত্তিকা অংশ সেসব রশ্মির অনেকটাই প্রতিরোধ করে। কিন্তু খোলা আাকাশে তা সম্ভব নয়। সরাসরি বিভিন্ন রশ্মির প্রভাব পড়ে মানবশরীরে। সেখানে সদাসর্বদাই উচ্চশক্তিসম্পন্ন কণা চলাচল করে। সেখান থেকে ইলেকট্রন, নিউট্রনের মতো পারমাণবিক কণার বিচ্ছুরণ ঘটে। আর তার প্রচণ্ড শক্তি মা এবং ভ্রূণের কোষের ক্ষতি করে। তাতে মা এবং গর্ভস্থ সন্তানের বড় ক্ষতির সম্ভাবনা। ডিএনএ এসব রশ্মিতে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্যানসারের ঝুঁকিও থাকে।
এবার জন্মের পর ভাসমান অবস্থায় সন্তানকে রাখা যাবে। কিন্তু মা বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে পারবেন না, স্তন্যপান করানোও প্রায় অসম্ভব। তাতে শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে ধাক্কা খাবে। শূন্যে ভেসে থাকার ফলে মাধ্যাকর্ষণের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারবে না। স্বাভাবিক হাঁটাচলা, ঘুম, খাওয়ার মতো দৈনন্দিন কাজ রপ্ত করতে সময় লাগবে নবজাতকের। সবমিলিয়ে, অ্যাডভেঞ্চারের টানে মহাকাশে সন্তানের জন্ম দিলেও মাথায় রাখবেন, তার যাবতীয় সুরক্ষাবলয় কিন্তু শূন্য।